আমরা আসছি অপেক্ষা করুণ---আমরা আসছি অপেক্ষা করুণ --- আমরা আসছি অপেক্ষা করুণ -

বকশীগঞ্জে মহিলা মার্কেটের দোকান বরাদ্দে ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতি



স্বজনপ্রীতি ব্যাপক অনিয়ম সেচ্ছাচারিতা ও দুর্নীতির মাধ্যমে বকশীগঞ্জে মহিলা মার্কেটের দোকান বরাদ্দ দিতে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এই নিয়ে প্রকৃত মহিলা ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার পায়নি। 
জানা গেছে এলজিইডির অর্থায়নে আরআইপি-২  বকশীগঞ্জ শহরের প্রাণ কেন্দ্রে নির্মিত পনর লাখ টাকার ব্যয়ে ৮ কক্ষ বিশিষ্ট অর্ধপাকা এই সরকারি মার্কেটটি মাসিক প্রতিকি মূল্যে ভাড়ায় প্রকৃত মহিলা ব্যবসায়ীদের নামে বরাদ্ধ দেওয়ার জন্য নির্মাণ করা হয়েছে। মার্কেটের কার্যক্রম শুরু করার জন্য এই এলাকার এমপি ও তথ্যমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ ২০১১ সালের ১৫ জুলাই আনুষ্ঠানিকভাবে মহিলা মার্কেটের উদ্ভোধন করেন। নিয়ম অনুযায়ি এই মার্কেটে যে সমস্ত মহিলা ব্যবসার সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত, পরিবার প্রধান মহিলা, বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের মহিলা সদস্য, এবং অর্থনৈতিকভাবে বেকারগ্রস্ত মহিলারা বরাদ্দ পাবে। কিন্তু এই বরাদ্দ নিয়ে বছরব্যাপী স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগ নেতাদের সাথে ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে ধরকষাকষি হচ্ছিল। অবশেষে শাসক দল ২টি মুক্তিযোদ্ধা ১টি উপজেলা চেয়ারম্যান ১টি ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ৪টি কক্ষ ভাগ-বাটোয়ার সমঝতা হয়। এই প্রেক্ষিতে সদর ইউপি চেয়ারম্যান ও হাট-ইজারাদার কমিটির সভাপতি ফখরুজ্জামান মতিন দোকান বরাদ্দের জন্য গত ১৫ মে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন। ৮ কক্ষ বিশিষ্ট ওই মহিলা মার্কেটের দোকান বরাদ্দের জন্য ৫৬ টি আবেদন জমা পড়ে। মহিলা ব্যবসায়ীদের বাদ দিয়ে সদর বাজার ইজারাদার ও উপজেলা আওয়ামীলীগের এক অন্যতম নেতার স্ত্রী, উপজেলা আওয়ামীলীগের নেতার শ্যালিকা ও এক মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী সরকারি অবসর প্রাপ্ত চাকুরীজীবিকে দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও মার্কেটের অন্যান্য কক্ষ বরাদ্দে সাড়ে তিন থেকে ৪ লাখ টাকার হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। যাদের নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে তাদের মধ্যে দু’এক জন বাদে প্রত্যেকের স্বামী কোটি টাকার ব্যবসায়ী মালিক। এই মার্কেট বরাদ্দে স্বজনপ্রীতি অনিয়মের বিষয়ে একাধিক আবেদনকারী অভিযোগ দায়ের করলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এই নিয়ে প্রকৃত মহিলা ব্যবসায়ী আবেদনকারীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এই ব্যাপারে ইউপি চেয়ারম্যান ও হাট-ইজারাদার কমিটির সভাপতি ফখরুজ্জামান মতিন টাকা নেওয়া কথা অস্বীকার করে বলেন মার্কেট বরাদ্দ কোন অনিয়ম হয়নি।

Read more »

স্বার্থন্বেষীর বাধার মুখে বকশীগঞ্জ পৌরসভা



দুষ্ট চক্রের বাঁধার মুখে পড়েছে সরকারি গেজেটে ঘোষিত বকশীগঞ্জ পৌরসভা। জনগণের প্রত্যাশার প্রতিফলনে বাধা হয়ে দাড়িয়েছে একটি স্বার্থন্বেষী মহল। খাই খাই মহলটি এলাকার উন্নয়নের চিন্তা বাদ দিয়ে ব্যক্তি স্বার্থ হাসিল করতে বকশীগঞ্জ পৌরসভা গঠনে জোর বিরোধীতা করে আসছে। তারা বিভিন্ন দপ্তরে পৌরসভা বাতিলের দাবি জানিয়েন।
জানাগেছে উপজেলার সদর বকশীগঞ্জ ইউনিয়নের রাজেন্দ্রগঞ্জ ও চরকাউরিয়া মৌজা পুরো অংশ, মালিরচর আংশিক ও বাট্টাজোড় ইউনিয়নের গোয়ালগাঁও মৌজার ক্ষুদ্র অংশ নিয়ে বকশীগঞ্জকে পৌরসভা উন্নতি করার জন্য সরকারি গেজেট প্রকাশিত হয়। বকশীগঞ্জের সদর মাঝপাড়া এলাকার বাসিন্দা ও মুক্তিযোদ্ধার সাবেক ডিপুটি কমান্ডার আব্দুল বাসেত বলেন ভৌগোলিক কারনে জামালপুর জেলার অন্য উপজেলার চেয়ে বকশীগঞ্জ আত্ম-সামাজিক ও বাণিজ্যক দিক থেকে অনেক উন্নতি। বকশীগঞ্জ উপজেলাকে অনেক আগেই পৌরসভার মার্যদায় উন্নিত করার দাবি ছিল দীর্ঘদিনের।  এলাকাবাসীর এমন দাবির স্বার্থে এলাকার সাংসদ ও তথ্যমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদের প্রচেষ্টায় বকশীগঞ্জকে পৌরসভায় উন্নতি করেছেন। অপরদিকে খাই খাই মহলটি তাদের এলাকার উন্নয়ন বাদ দিয়ে নিজের স্বার্থ হাসিলে পৌরসভা বানচালের অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
অপর এক বাসিন্দা নূরুল ইসলাম ফোরকান বলেন পৌরসভা এখন বকশীগঞ্জ এলাকা মানুষের প্রানের দাবী। যারা এর বিরোধীতা করছে তারা জনবিচ্ছন্ন ও গণধিকৃত হয়ে পড়বে। এই ব্যাপারে বকশীগঞ্জ সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফকরুজ্জামান মতিন বলেন আমি ও আমার পরিষদ এক বছর আগে নিবার্চিত হয়েছি। পৌরসভা হলে কিছু মেন্বারের ক্ষমতা হারিয়ে যাবে এবং আমারও ক্ষমতা হ্রাস পাবে। বাধ্য হয়ে পৌরসভা বাতিলের পক্ষে অবস্থান নিয়েছি।

Read more »

লালন তোমার আরশীনগর








লালনের কাছে চলো শাহিন ভাই মোবাইলে কল দিয়ে জানালেন। আমি বললাম কবে যাবেন? শাহিন ভাই বলল, গেলে এখনই যেতে হবে। বুঝতে পারলাম কয়েকদিন ধরে লালন স্মরণ মেলা হচ্ছে কুষ্টিয়ার ছেউরিয়ায়। শাহিন ভাই তার খবর দেখেছেন বোধহয়। আমাদের শাহিন ভাই খুব ব্যস্ত মানুষ। তার স্কুল আছে, কম্পিউটার সেন্টার আছে। কিন্তু ভ্রমণের কথা মনে উঠলে সব ফেলে ছুটে যায় রাঙ্গামাটি, জাফলং, কক্সবাজার। এমনি ভ্রমণাকুল জায়গায়। ভ্রমণ তার নেশা হয়ে গেছে। একবার আমি বললাম, শাহিন ভাই আগ্রার তাজমহল দেখে আসি। শাহিন ভাই বললেন, আগে দেশ দেখ। দেশের কোন সুন্দর জায়গার বর্ণনা পেলেই সেখানে যাওয়ার পরিকল্পনা এঁটে বসে থাকেন। এরই ধারাবাহিকতায় লালনের আখড়ায় ভ্রমণ। যথারীতি শাহিন ভাই ভোরে আমার বাড়িতে এসে উপস্থিত। সঙ্গে আরেক প্রিয় মুখ আতিক আজিজ। আমাকে ঘুম থেকে তুলে নিয়ে চলল কুষ্টিয়ার উদ্দেশে। শনিবার দিন ১০ মার্চ। ভাগ্য ভালো আমাদের রাস্তায় জ্যাম পড়েনি। নইলে মিজমিজি থেকে যাত্রাবাড়ী যেতে এক ঘণ্টা লেগে যেত। সেখানে ঘণ্টাখানেকের মধ্যে গাবতলী পৌঁছে গেলাম। দিনটা আমাদের অনুকূলে মনে হচ্ছে। বাসে সিট পেলাম মাঝামাঝি। বাস কাউন্টারগুলোতে কোন ভিড় নেই। রাজনৈতিক কোন বেপার-সেপার থাকতে পারে। টিকিট কেনার সময় কাউন্টার ম্যানেজার জানতে চাইল, কুষ্টিয়ার কোথায় যাবেন। বললাম, লালনের আখড়ায়। থাকব কি না জিজ্ঞেস করল? বললাম, না থাকবা না। আজই ফিরে আসব। ম্যানেজার পরামর্শ দিল আগামীকাল বাস বন্ধ থাকবে। তাই ওখানে নেমেই ফিরতি গাড়ির টিকিট কিনে নেবেন। কাউন্টারে বাস এলো সাড়ে ১০টায়। চড়ে বসলাম গাড়িতে, লালনের দেশের পানে। যেতে যেতে পথে আমার মুগ্ধ হওয়ার পালা। আগে একবার যমুনা ব্রিজ দিয়ে সিরাজগঞ্জ গিয়েছিলাম। আহামরি কিছু লাগেনি। সেবার খুব জ্যাম পড়েছিল। ৭ ঘণ্টা নিয়ে ছিল সিরাজগঞ্জ যেতে। এখন চলে এলাম ৩ ঘণ্টায়। মুগ্ধতা জেঁকে বসে আমার চোখে। এদিকের রাস্তাগুলো পরিষ্কার। একদম মসৃণ। আসল খেলাটা হল রাস্তার দু’পাশের দৃশ্য। তাকালে দেখতে পাই বিস্তৃণ আম ও লিচুর বাগান। পরিকল্পিত বাগানগুলো দেখতে ঠিক ছবির মতো। আম অথবা লিচুর গাছগুলো ছাতার মতো বসানো। তাতে মুকুল এসেছে মন ভরিয়ে। এ দৃশ্যগুলো যতই দেখি ততই মন পুলকিত হয়ে যায়। ইচ্ছা হচ্ছিল গাছগুলোর সঙ্গে ছবি তুলি। গাছগুলোকে ছুঁয়ে দেখি। বাগানের ছায়ায় গিয়ে কিছু ফ্রেস নিশ্বাস নেই। তা আর হল না। বাসওয়ালাকে বলতে বললও টাইম নাই। আমাদের আবেগ তাদের কাছে দু’আনার মূল্য পেল না। এ মনোরোম দৃশ্য দেখতে দেখতে কখন পৌঁছে গেছি কুষ্টিয়া বাসস্ট্যান্ডে। নেমেই ঢাকা ফেরার টিকিট কিনে নিলাম। টিকিট না কিনলে সাংঘাতিক ঝামেলা হতো বুঝতে পারলাম। চললাম লালনের আখড়ায়। এখানকার বাহন হল রিকশা বা ব্যাটারিচালিত বেবি। বেবিওয়ালারা সুর করে ডাকতে থাকে এই লালন, লালন।
আমি জিজ্ঞেস করলাম ভাড়া কত? বলল ১০ টাকা। দরাদরি করার সময় ছিল না। উঠে বসলাম বেবিতে। যাচ্ছে বেবি কবি আজিজুর রহমান সড়ক, বড় বাজার হয়ে তারপর লালন। চলে এলাম লালনের স্মরণ মেলা এলাকায়। ভেবেছিলাম। বিরাট আয়োজন। এসে দেখি সাদামাটা। ঘুরতে ঘুরতে গেলাম সাইজির মাজারে। ছোট একটা ঘরে সাইজি শায়িত। এখানে সাইজিকে ঘিরে বেশকিছু কবর আছে।
সাইজির ভক্ত বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা থেকে এসেছে দেখা যায়। একজন ভারতীয়ের কবরও আছে এখানে। এ কবরগুলোর প্রতি বাউলদের ভক্তিশ্রদ্ধা আমাকে বিস্মিত করেছে। ভক্তিও প্রচণ্ড। এরা লালন সাইজীর কবর জেয়ারত করে পেছন হেঁটে ফেরেন। এখানকার খাদেম মোহাম্মদ আলী শাহ’র লালন স্টাইল চুল দাড়ি-গোঁফ। তার প্রতি ভক্তিও তাক লাগানোর মতো। মাজারের পর্ব শেষে গেলাম অডিটরিয়াম ভবনের দিকে। এটাই বাউলদের আসল জায়গা। বাউল-বাউলানীরা গোল হয়ে বসে, কেউ দাঁড়িয়ে গলা ছেড়ে হরদম গান গাইছে। দু’চার জন ফকিরি ঢংয়ে নেচেও যাচ্ছে। অন্য কোন গান নেই। শুধু লালনের গান। একাডেমির পাশের ভবন হল লালন মিউজিয়াম। দোতলায় লাইব্রেরি। মিউজিয়ামে তেমন কিছুই নেই। ভক্তদের ঘটিবাটি। সাইজীর ঘরের একটা দরজা ও তার বসার জলচকি সংরক্ষিত আছে। সাইজীর অনেক সাগরেদের আঁকা ছবি, কবি গুরুর ছবি, হাছন রাজার ছবিও মিউজিয়ামে আছে। মিউজিয়ামের প্রবেশ মূল্য ২ টাকা। এ টাকাটা কিসের জন্য বুঝা গেল না। মিউজিয়াম বলতে যা বুঝায় তার সিকি ভাগও নেই। ভেতরে ময়লা-আবর্জনায় ভরা। এখানে এসে জেলা প্রশাসক বনমালী ভৌমিকের খুব প্রশংসা শুনলাম। আগে নাকি কিছু ছিল না। তিনি উদ্যোগ নিয়ে ভবনগুলো করেছেন। ধন্যবাদ তাকে। তবে তাকে এগুলোর প্রতি আরেকটু যত্নবান হতে বলব। তবেই যথাযর্থ সাইজীর ভক্ত হিসেবে তিনি পরিগণিত হবে। লালনের মাজারে ভ্রমণ করে একটা ব্যাপার নিশ্চিত হলাম এখানে মানুষ শিল্পী হয়ে যায়। এমন কাউকে পেলাম না। একবার হলেও গুনগুনিয়ে লালনের গান গাইছে না। যে দিকেই কান পাতি সেদিকেই শুনতে পাই সব লোকে কয় লালন কি জাত সংসারে খাঁচার ভিতর অচিন পাখি কেমনে আসে যায়  মিলন হবে কত দিনে, আমার মনের মানুষ সনে বাড়ির কাছে আরশিনগর, সেথায় এক পড়শি বসত করে  কে কথা কয়রে দেখা দেয় না, হাতের কাছে নড়ে চড়ে খুঁজলে জনম ভর মেলে না জাত গেল জাত গেল বলে, চাঁদের গায়ে দাগ লেগেছে আমার ভেবে করব কি?  এমনি অসংখ্য ভাববাদী গান বিরতিহীনভাবে কানে এসে প্রবেশ করে। আমি লক্ষ্য করলাম লালনের মাঝে একটা জাদু-মন্ত্রের ব্যাপার আছে। তার গানে যেমন আমরা ভস্মীভূত হইয়া আছি তেমনই সে তার আখড়ার দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। এখানে দর্শনীয় কিছু নেই। তারপর হাজার হাজার লোক ছুটে আসে। কিসের কারণে। আমার ধারণা এ লেখা পড়ার পর আপনিও লালনের আখড়ায় যাওয়ার তাগিদ অনুভব করবেন। কারণ কী? কারণ আর কিছু না। লালনের জাদু-মন্ত্র।


Read more »

মেঘের দেশের নাম নীলগিরি




নীলগিরি। নামটাই এত চমৎকার যে নাম শুনলেই জায়গাটাতে ঘুরে আসতে ইচ্ছা করে। বন্ধুদের কাছে নীলগিরির কথা অনেক শুনেছিলাম আর কবে নিজে যাব সেই আশায় প্রহর গুনতাম। হঠাৎ একদিন খালাত ভাই জানাল, তারা বান্দরবান যাচ্ছে। ব্যাস, সুযোগের সদ্ব্যবহার করলাম। বেরিয়ে পড়লাম চার দিনের ভ্রমণে। খালা-খালুর বান্দরবানে যাওয়ার মূল উদ্দেশ্য পাহাড়ে তামাকের পরিবর্তে হলুদ চাষ পর্যবেক্ষণ করা। কিন্তু আমার চিন্তা-চেতনা কেবল নীলগিরিকে নিয়েই ছিল। যা হোক, আমরা সকাল ৭টায় নিজেদের গাড়িতে রওনা দিলাম। ঢাকা থেকে বান্দরবান প্রায় ৩১৪ কিলোমিটার পথ। সময় লাগে ছয় ঘণ্টার মতো। আমরা পাঁচজন খালা, খালু, দুটি খালাত ভাইবোন ও আমি বিকালে নামলাম মিলনছড়ি রিসোর্টে। সেখানে আমাদের গাইড হলেন খালুর বিশ্বস্ত কর্মচারী জনাব জ্ঞান চাকমা। তিনি বান্দরবানের চাকমা সম্প্রদায়ের মানুষ। নেহাতই ভদ্র ও পরোপকারী লোক। তার থেকে জানতে পারলাম, স্থানীয় চালক ছাড়া নীলগিরিতে যাওয়া মোটেই উচিত নয়। নীলগিরিতে যেতে আড়াই ঘণ্টা লাগে। তাই তিনি একটি গাড়ি স্থানীয় ভাষায় যাকে বলে ‘চান্দের গাড়ি’ সেটা ঠিক করে দিলেন। এমন ড্রাইভার নিলেন যিনি প্রায় প্রতিদিনই পর্যটক নিয়ে নীলগিরিতে যান। পর দিন সকাল ৭টায় খালু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে আমাদের নিয়ে রওনা দিলেন নীলগিরির উদ্দেশে। চান্দের গাড়ি হচ্ছে আমাদের ঢাকার টেম্পো বা লেগুনার মতো। ভাড়া জনপ্রতি ৩০০ টাকা। যাত্রাপথের শুরুতেই পেলাম হাতিবান্ধা নামে ত্রিপুরা গ্রাম, গ্রামটির আদিবাসীরা খুবই চমৎকার। আঁকাবাঁকা পথ পেরোতেই চোখে পড়ল শৈলপ্রপাত ঝরনা (শহর থেকে চার কিলোমিটার দূরে), যার ঝমঝম শব্দ আগে থেকেই কানে বাজছিল। আমরা গাড়ি থামিয়ে নামলাম। জ্ঞান চাচার থেকে জানতে পারলাম সাংগু নদী ও এই শৈলপ্রপাত ঝরনা বান্দরবানের পানীয় চাহিদা মিটায়। চান্দের গাড়ি আবার ছাড়ল। শুরু হল রোমাঞ্চকর রাস্তা। একেবারে চড়ক গাছে যেন চড়েছি। গাড়ি কখনও খাড়া উপরে উঠছে তো কখনও নিচু ঢালে নামছে। তবে তার চেয়েও ভয়ের বিষয় যে রাস্তার বাঁক একটু ভুল করলেই খাড়া ৩০০ ফিট নিচে পড়ে যাব। খালু জ্ঞান চাচাকে স্থানীয় ড্রাইভার নেয়ার কারণে ধন্যবাদ দিলেন। পথে পড়ল পাহাড়ি উপজাতিদের গ্রাম বাওম, ফারুকপাড়া, মরুপাড়া। প্রায় এক ঘণ্টায় ১৪ কিলোমিটার পাহাড়ি পথ পাড়ি দিয়ে আমরা পৌঁছলাম চিম্বুক। অপরূপ নয়নাভিরাম চিম্বুকে এসে আমরা যারপরনাই অভিভূত। চিম্বুক বাংলাদেশের উঁচু স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এর উচ্চতা এক হাজার ৫০০ ফিট উপরে। এখান থেকে দিগন্তবিস্তৃত সবুজ পাহাড় দেখা যায় এমনকি দূরে বঙ্গোপসাগরও দেখা যায়। চিম্বুক বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি চেকপোস্ট। পুরো পাহাড়ি এলাকা সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে। এখান দিয়েই নীলগিরি, থানচি, রুমা, বগালেক ও কেওকেরাডং যাওয়া হয়। চিম্বুক চেকপোস্টে আমরা সেনাবাহিনীকে গাড়ির নাম্বার ও তথ্যাদি দিয়ে আবার রওনা দিলাম। চিম্বুকের সবুজ পাহাড় দেখে আমার মনে বারবার প্রশ্ন জাগতে শুরু করল ‘নীলগিরি’ নাম কেন হল? ‘সবুজগিরি’ হওয়ার কথা। আমরা আরও দুই ঘণ্টা পথ পাড়ি দিলাম। একে বলে দুঃসাহসিক ভ্রমণ। এত ভয়ংকর ও উঁচু-নিচু পথ জীবনেও উপভোগ করিনি। আমরা সবাই রোমাঞ্চিত। অবশেষে আরও ৪২ কিলোমিটার পথ গাড়ি চালানোর পর পৌঁছলাম আমাদের গন্তব্য স্বপ্নের নীলগিরি। নীলগিরি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে দুই হাজার ২০০ ফিট উপরে এবং বান্দরবান টাউন থেকে ৫৬ কিলোমিটার দূরে। কিন্তু গাড়ি থেকে নেমে অনেকটা হতাশ হচ্ছিলাম। আমার খালাত বোন বলেই ফেলল, কোন জায়গায় এলাম, ঝড় হচ্ছে। আমরা পুরো ভিজে যাচ্ছি। কুয়াশায় কাউকে ভালো করে দেখতে পাচ্ছি না। দৃশ্য দেখব কেমন করে!’ কথা শুনে জ্ঞান চাচা হাসলেন ও অপেক্ষা করতে বললেন। আমরা ঠায় দাঁড়িয়ে রইলাম। হঠাৎ চারদিক পরিষ্কার হয়ে গেল। একটু আগের ঝড় একেবারেই নেই। গায়ে ঝলমলে রোদ পড়ছে। আমরা প্রকৃতি দেখে বাকরুদ্ধ, বিমোহিত। মনে হচ্ছে রূপকথার রাজ্যের মেঘের দেশে এসে পড়েছি। আশপাশের পাহাড়ে সাদা মেঘ, হাতের কাছেই মেঘ উড়ে উড়ে যাচ্ছে। আমাদের নিচের পাহাড়ে মেঘ পাহাড়ের গায়ে বাড়ি খেয়ে সাদা চাদর হয়ে আছে। আর মেঘের ফাঁক গলে এসে মেঘের ওপর সোনালি রোদ চকমক করছে। আর আকাশের নীল রঙ এসে শুভ্র সাদা মেঘের সঙ্গে মিশে নীল একটা আভা তৈরি করছে যা পুরো পাহাড়ি এলাকাকেই নীল মেঘের দেশ বানিয়ে ফেলেছে।

এটাই হল নীলগিরি। জ্ঞান চাচা হেসে বললেন প্রথম এসেই আমরা কোন এক মেঘের ভেতরে ঢুকে পড়েছিলাম। আমরা অবাক। আমরা মেঘের ভেতরে ছিলাম এতক্ষণ! আশ্চর্য অনুভূতি লাগল গায়ে। আমার বোন ও ভাইয়ের মুখে মেঘ নিয়ে যত গান আছে সব গেয়ে চলছে। আমি শুধুই অভিভূত। ভাবছি বান্দরবান এসে যারা নীলগিরিতে না আসবে তারা কতটাই না বোকামি করবে। অপলক নয়নে বিধাতার প্রকৃতি নীলগিরি দেখছি আর গাইছি ‘মেঘের কোলে রোদ হেসেছে বাদল গেছে টুটিঃ আহা হা হা’। নীলগিরিতে রাতে অবস্থানের জন্য কটেজ তৈরি করেছে। ভিআইপি তিনটির প্রতি রাতযাপন তিন হাজার থেকে সাত হাজার ও ছোটগুলোর চার বেডের রুম দুই হাজার টাকার মতো। আরও কিছু রেস্টুরেন্ট আছে। আমরা সেখানে চুমাট কুরাহুরা নামক মারমা খাবার খেলাম যা হল বাঁশের গিটের ভেতরে মুরগি রান্না। সত্যি নীলগিরি যেন মেঘের দেশ।

Read more »

সাগরতলের মৎস্যকন্যা




ছোটবেলায় নানি-দাদিদের কাছ থেকে অনেক রূপকথার গল্প শুনেছি। এমন একটা সময় ছিল যখন এসব গল্প তয় হয়ে শুনতাম আমরা। যেমন ডাইনি বুড়ির গল্প, ১২ হাত লম্বা চুলের রাজকুমারীর গল্প, রাক্ষস-খোক্ষসের গল্প, সাগরতলের রাজকন্যার গল্প ইত্যাদি ইত্যাদি। তবে সাগরতলের রাজকন্যার গল্পটি অনেকের মনেই রেখাপাত করে। গল্পটি ছিল এমন : একদা সাগরতলে ছিল এক রাজকন্যা। তার উপরের অর্ধেক ছিল মানুষের মতো আর বাকি অর্ধেক মাছের মতো। একসময় তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা হয় মানব রাজপুত্রের। রাজকুমার মৎস্য কন্যাকে বলে, ‘যদি সে পূর্ণাঙ্গ মানুষে রূপ নিতে পারে তাহলে তাদের মধ্যে মিলন হওয়া সম্ভব।’ অনেক সাধনার পর মৎস্যকুমারী রূপান্তরিত হয় পূর্ণাঙ্গ মানুষে। কিন্তু এবার রাজপুত্র তাকে বিয়ে করতে অসম্মতি জানায়। এ দুঃখে মৎস্য কন্যারূপী রাজকন্যা নিজের প্রাণ বিসর্জন দেয়। না, এটি কোন বাস্তবের চিত্র নয়। বিখ্যাত লেখক হ্যান্স ক্রিশ্চিয়ান এন্ডারসন তার দ্য লিটল মারমেইডের রূপকথার গাঁথুনী এরকম কাহিনী দিয়েই সাজিয়েছেন। তবে বাস্তবেও কি মৎস্য কন্যারা ছিল?
স্কটল্যান্ডের লোকমুখে প্রচলিত আছে, সেখানকার ইয়োলা দ্বীপের একজন পাদ্রির প্রেমে পড়ে এক মৎস্যকন্যা। পাদ্রির প্রেমে হাবুডুবু খেয়ে মৎস্য কন্যা একসময় জানতে চায় কিভাবে সে আর অধিকারী হয়ে মানুষে রূপ নিতে পারবে। পাদ্রি জানায় যদি, সে চিরদিনের জন্য সাগর ছাড়তে পারে। যেহেতু তার জন্য এটা ছিল অসম্ভব, সেজন্য মৎস্য কন্যা চোখের জল ফেলে চলে যায়। তার চোখের জলগুলো আজও সেখানে নুড়ি হয়ে আছে।
১৪০০ শতাব্দীতে আফ্রিকার বেনিন অঞ্চলের রাজা ছিলেন চ্যান। তার রাজত্বকালে রাজ্যে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে স্বেচ্ছায় মেরে ফেলা হতো। একসময় চ্যান আক্রান্ত হন প্যারালাইসিসে। কিন্তু বেঁচে থাকার জন্য তিনি ঘোষণা দেন যে রাজা চ্যান সাগর দেবতা হিসেবে পুনঃজš§ লাভ করে। তাই তার পা নেই। বয়সের ভারে চ্যান মারা গেলে তার সে রহস্য উচিত হয়ে যায়। যা এখনও ব্রিটিশ জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে। সমুদ্র বিজ্ঞানীদের মতে, এখনও সমুদ্রের অনেক কিছু তাদের কাছে অজানা। তাই মৎস্যকন্যার মতো কিছু থেকে থাকলেও বিচিত্র কিছু হবে না। ইতিহাসবিদদের মতে, সাগরকন্যাদের চুলে ছিল নানা রঙ। তবে তাতে শৈবাল রঙের প্রাধান্যই ছিল বেশি। এছাড়া তাদের ত্বক ছিল জলপাই রঙের, মুখের রঙ ধূসর, লম্বা লেজে ছিল গোলাপি কেশগুচ্ছ। কোমরে কমলার বন্ধনী এবং আঙ্গুলের ফাঁকে ছিল জলপাই রঙের জাল।
মৎস্যকন্যা সম্পর্কে উত্তর আয়ারল্যান্ডবাসী এখনও একটি গল্পকে সত্য মনে করে। সেটি ছিল ৫৫৮ সালের ঘটনা। তখন লিবানে হয়ে যাওয়া এক বন্যায় মারা যায় ছোট্ট একটি মেয়ের বাবা, মা। একসময় অভিমান করে সেও চলে যায় পার্শ্ববর্তী সাগরে। সেখানে ঢেউয়ের নিচে দিনের পর দিন থাকতে থাকতে সে রূপ নেয় মৎস্যকন্যায়। একদিন সে সাগরে গা এলিয়ে ভাসতে থাকলে কিছু জেলে তাকে তাদের জালে আটক করে। এর নতুন নাম দেয় মারজেন। বন্দি অবস্থায়ই সে মারা যায়। তাকে নিয়ে অনেক অবিশ্বাস্য ঘটনারও সৃষ্টি হয়েছিল। রোমান লেখক ক্লিনি জানান, অগাস্টাস সিজারের একজন অফিসারে সাগরের অদূরে কয়েকটি মৎস্যকন্যাকে দেখেন। যাদের সবগুলো তখন ডাঙ্গায় আসায় আটকে গিয়ে করুণভাবে প্রাণ হারায়। অনেক আগে ব্যাবিলন এবং প্যালেস্টাইনের লোকেরা মৎস্যকন্যার পূজা করত। ফিনিশিয়ান ও কারিয়ানশিয়ানদের মুদ্রায় থাকত মৎস্যকন্যাদের ছবি। তখন রটেছিল যে, আলেকজান্ডার সাগরের নিচে মৎস্যকন্যাদের সঙ্গে ঘুরে বেড়াতেন।
পশ্চিম ফ্রাইসল্যান্ডে ১৪০৩ সালে একটি মৎস্যকন্যা দেখা গিয়েছিল। যার সম্পর্কে ১৭০০ শতকের একজন ইতিহাসবিদ বিস্তারিত বলেন। তিনি জানান, তখন গ্রামের মানুষের সঙ্গে মৎস্যকন্যাটির ভাব হয়। যা টিকেছিল দীর্ঘ পনের বছর। এরপর সে মারা যায়। অর্ধেক মাছ অর্ধেক মানুষের মৃতদেহের প্রদর্শনী শিরোনামে লন্ডনের হলে একটি প্রদর্শনী ১৮৩০ সালে অনুষ্ঠিত হয়। দশ হাজার লিরার বিনিময়ে এ মৃতদেহটি খরিদ করে ইটালির দুই সহোদর। তবে একজন প্রকৃতিবিদ ওই মৃতদেহটি ভালোভাবে দেখে বলেন, এটি আসলে একটি বানরের মৃতদেহ, যার নিচের অংশে মাছের চামড়াকে সূক্ষ্ম সেলাইয়ের মাধ্যমে জোড়া লাগানো হয়। অবশ্য ১৯৬১ সালের দিকে একটি পর্যটন সংস্থা জীবিত অবস্থায় মৎস্যকন্যাকে নিয়ে আসতে পারলে পুরস্কৃত করা হবে বলে ঘোষণা দেয়। যা এখনও কারও পক্ষে সম্ভব হয়নি। গ্রিক পৌরাণিক কাহিনীতে উল্লেখ আছে, সমুদ্রে চলাচল করা নাবিকদের সম্মোহন করে সাগরের মৎস্যকন্যারা। তারপর তাদের মেরে ফেলে। এছাড়া অনেক স্থানে মৎস্যকন্যাদের ডাইনিদের সঙ্গেও তুলনা করা হয়। তবে বেশ পূর্বে ৫৯ ইঞ্চি লম্বা মৎসমানবরূপী একটি প্রাণী জালে ধরা হয়। বর্ণ দ্বীপে আটক করা প্রাণীটি ইঁদুরের মতো আওয়াজ করেছিল। কিছু না খেয়ে ১০৩ ঘণ্টা এটি বেঁচেছিল। প্রাণীটিকে ছোট মাছ খাওয়ানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। কয়েকজন জেলে সম্প্রতি দাবি করেছেন, তারা মৎস্যকন্যার আদলে এবার মৎস্য নরের সন্ধান পেয়েছেন। তারা যখন কাসপিয়ান সাগরে মাছ ধরছিলেন, তখন এই মৎস্যনরটিকে দেখতে পান। মাছ ধরার ওই ট্রলারের ক্যাপ্টেন গাফার গ্যাসানভ ইরানি সংবাদপত্র ‘জিন্দেগি’কে বলেছেন, মাছ ধরার সময় তারা তাদের ট্রলারের পাশাপাশি অনেক সময় ধরে একটি মৎস্যনরকে সাঁতরাতে দেখেন। তিনি আরও বলেন, ‘প্রথম দিকে আমরা একে একটি বড় মাছ বলে মনে করি। পরে একে নিবিড় পর্যবেক্ষণ করার চেষ্টা করতেই এর মাথায় কালো-সবুজ চুল দেখতে পাই। এর ডানাও ছিল বেশ অদ্ভুত ধরনের। তাছাড়া দেহের সুখভাগে হাতের মতো অঙ্গেরও দেখা পেয়েছি। প্রত্যক্ষদর্শীদের কথা অনুযায়ী মৎস্যনরটি ছিল প্রায় সাড়ে পাঁচ ফুটের মতো লম্বা।

Read more »

পায়ের ‘গুণে’ মশার কামড়



অনেক সময় দেখা যায়, আপনার পাশের জনকে মশা কামড়াচ্ছে না অথচ আপনি মশার কামড়ে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন। এসব বিষয় নিয়ে বিজ্ঞানীরা গবেষণা করেছেন। সম্প্রতি একদল গবেষক জানিয়েছেন, যারা পা খোলা রাখেন তাদের পায়ে নানা ধরনের ব্যাকটেরিয়া থাকে। ওই ব্যাকটেরিয়াগুলো এমন এক ধরনের গন্ধ তৈরি করে, যা মশাকে আকৃষ্ট করে। যার পায়ে ওই ধরনের ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ বেশি থাকে মশা তাকেই বেশি কামড়ায়। গবেষকরা আরও জানান, বিশেষত যার পা বেশি অপরিষ্কার সেখানে ওই ধরনের ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি বেশি থাকে। সেজন্য যে কোন উপায়ে হোক পা বা শরীরের যে কোন খোলা অংশ পরিষ্কার রাখতে হবে। গবেষক দলের প্রধান নেদারল্যান্ডসের ওজেনিনজেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. নেইলস ভারহালস্ট বলেন, মশার কামড় থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য মশারোধক ক্রিম ব্যবহার করলে তেমন লাভ হবে না। তবে নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা থেকে ত্বককে ব্যাকটেরিয়ামুক্ত রাখতে পারলে মশাকে প্রতিরোধ করা সম্ভব। গবেষকরা গাম্বিয়া, লাইবেরিয়া ও আফ্রিকায় ২০ থেকে ৬৪ বছর বয়সী ভ্রমণপিপাসুদের নিয়ে একটি গবেষণা চালিয়ে এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন। গবেষণা প্রতিবেদনটি পাবলিক লাইব্রেরি অব সায়েন্স ওয়ান সাময়িকীতে প্রকাশ করা হয়েছে।


সূর্যের পরিণতি হবে নীহারিকায়
সৌরজগতের প্রাণ সূর্য যেদিন নিভে যাবে, সেদিন একটা নেবুলা বা নীহারিকায় পরিণত হবে বলেই নাসার গবেষকরা জানিয়েছেন। সম্প্রতি মুমূর্ষু একটি নক্ষত্রের ছবি তুলেছেন নাসার গবেষকরা। গবেষকদের দাবি সূর্যও ঠিক এ ছবিটির মতোই নীহারিকার রূপ ধারণ করবে। গবেষকদের তোলা ছবিতে দেখা গেছে, ওই নক্ষত্রটির বহিঃআবরণে বিশাল গ্যাসের মেঘ ছড়িয়ে পড়েছে আর কেন্দ্র মিটমিট করে জ্বলছে। গবেষকদের দাবি, পাঁচশ’ কোটি বছর পর যখন সূর্যের জ্বালানি কমে যাবে তখন সূর্যের পরিণতিও এমন হবে। এই নীহারিকাটি নাম ডাম্বেল নেবুলা বা এম ২৭।  ১ হাজার ৩৬০ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। এ নেবুলাটি বাইনোকুলার বা টেলিস্কোপ ব্যবহার করেও দেখা সম্ভব।
সূত্র : ইন্টারনেট

Read more »

কচ্ছপের দীর্ঘ জীবনের রহস্য




অত্যন্ত শান্ত ও নিরীহ গোছের দীর্ঘজীবী প্রাণী কচ্ছপ। কচ্ছপের শরীরের উপরিভাগের শক্ত খোলস আÍরক্ষার ঢাল হিসেবে কাজ করে। যখন শিকারি বা কোন প্রাণী একে আক্রমণ করে তখন এর চারটি পা ও মাথা ওই শক্ত খোলসের ভেতরে গুটিয়ে ফেলে। যার ফলে শিকারি ব্যর্থ হয়ে একে ছেড়ে দেয়। তবে এর চেয়ে কয়েকগুণ বড় ও হিংস্র শিকারি ছাড়া একে কেউ আক্রমণ করে না।
কচ্ছপ অবশ্য একটি উভচর প্রাণী। অধিকক্ষণ জলে থেকে ওরা আবার ডাঙায় উঠে আসে। উভয় স্থানেই কচ্ছপের খাবারের সুবিধা রয়েছে। যেমন পানিতে থাকলে এরা পানিতে থাকা সবুজ উদ্ভিদ, শ্যাওলা প্লাংটন, অনুজীব ইত্যাদি খেয়ে থাকে। আবার ডাঙায় এসেও নরম উদ্ভিদ এবং উপকূলীয় এলাকায় জন্মনো বিভিন্ন ফল এরা খাবার হিসেবে পেয়ে যায়। তবে সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হল এরা দীর্ঘজীবী প্রাণী। এর কারণ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় কচ্ছপের শরীরে রোগ-জীবাণুর পরিমাণ খুব কম। তবে কচ্ছপের দীর্ঘায়ুর আরও কিছু কারণ রয়েছে। আফ্রিকার উত্তর উপকূলে শিকারি জেলেদের কাছে মাঝে মাঝেই এমন অতিকায় কচ্ছপ ধরা পড়ে যারা প্রায় মাঝবয়সী অর্থাৎ যাদের বয়স একশ’র কোঠা পেরিয়েছে।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে যেখানে গাছ পাথরের জরা-মৃত্যু আছে, সেখানে একটি সচল প্রাণী কীভাবে এতদিন বেঁচে থাকে। কচ্ছপের দীর্ঘায়ু হওয়ার প্রধান কারণ হিসেবে ওর শরীরের বহির্গঠনকেই ধরা হতো। তবে রকমারি কচ্ছপ নিয়ে দীর্ঘকাল গবেষণা চালিয়ে দেখা গেছে শরীরের মজবুত বহির্গঠনের চেয়েও ওর প্রকৃতিই দীর্ঘায়ু হওয়ার প্রধান কারণ।
কচ্ছপ নিরামিষভোজী জীব তারপর প্রকৃতিগতভাবেই চলাফেরা কম করে বলে কাজের ব্যাপারে শক্তিও খুব অল্প ব্যয় হয়। এ ছাড়া সুদীর্ঘ বিশ্রামও ওর জীবনীশক্তি বাড়িয়ে দিতে সাহায্য করে। বিশেষ দেহের গঠন অর্থাৎ হাড়ের পিঠ এবং মজবুত বক্ষদেশ কচ্ছপকে বাইরের প্রতিকূল আবহাওয়ার আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে সাহায্য করে। কচ্ছপের ফুসফুসও বেশ বড়। দেহের বাইরের আবরণ শক্ত এবং আঁটোসাঁটো হওয়ার দরুন কচ্ছপ কখনও ইচ্ছা করলেও ফুসফুস বেশি ফোলাতে পারে না। এমনকি কোন কোন জাতের কচ্ছপ ফুসফুসে যতটা হাওয়া ধরে তার চার ভাগের এক ভাগের বেশি হাওয়া নেয় না। ফলে একদিকে বেশি পরিশ্রমের শক্তি থাকে না এবং ফুসফুসের ক্ষয়ও হয় খুব ধীরে ধীরে।
কচ্ছপের প্রিয় ঋতু গ্রীষ্মকাল। অল্প রোদ কচ্ছপের বিশেষ প্রিয়। অল্প বৃষ্টিও কচ্ছপ পছন্দ করে কিন্তু বড় বড় ফোঁটার বৃষ্টি এড়িয়ে চলে। শীতকালটা কচ্ছপের পক্ষে খুব পীড়াদায়ক। অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকে এদের খুব একটা চোখে পড়ে না। সেই সময় এরা গর্ত খোঁজে। তৈরি গর্ত না পেলে নিজেরাই গর্ত খুঁড়ে নেয়। পাঁচ থেকে ১৫ কী ২০ ফুট পর্যন্ত গভীর গর্ত করে মাটির উত্তাপে নিজেদের বাঁচিয়ে রাখে। ঠাণ্ডা যদি বেশি পড়ে বা তুষারপাত হয় তখন খুব মুশকিল হয় কচ্ছপদের। গর্তের মুখে তুষার যে ঠাণ্ডা সৃষ্টি করে তা যদি খুব বেশি মাত্রায় গর্তের গভীরে প্রবেশ করে তাহলে অনেক সময় ঠাণ্ডার প্রকোপে কচ্ছপের মৃত্যু হয়। কচ্ছপ অক্টোবরের শেষে বা নভেম্বরের প্রথমে গর্তে প্রবেশ করে এবং বের হয় এপ্রিলের প্রথম দিকে। এ পাঁচ মাস চলে টানা বিশ্রাম। প্রায় অসাড় অবস্থায় থাকার দরুন ওই সময় তার কোন খাদ্যের প্রয়োজন হয় না। এপ্রিলের গোড়ার দিকে কচ্ছপ যখন বেরিয়ে আসে গর্ত থেকে তখন সে থাকে চরম দুর্বল অবস্থায়। দুর্বলতা কাটাতে কচ্ছপের মাস দুয়েক সময় লাগে। অনেকটা যেন পুনর্জর মতো নতুন জীবনীশক্তি অর্জন করে। দীর্ঘকাল অনশন করেও কচ্ছপ বেঁচে থাকে। এর জন্য প্রকৃতিও তাকে সাহায্য করে। পাঁচ মাস অনশন শুরু হওয়ার একমাস আগে থেকেই কচ্ছপ খাওয়া কমিয়ে দেয়। প্রকৃতি প্রতিবছরই তাকে অনশনের জন্য এমন প্রস্তুত করে তোলে।
পৃথিবীর অনেক দেশেই কচ্ছপকে পোষ মানানো হয়। রীতিমতো যত আত্তি করে বাগানে রাখার সুবন্দোবস্ত করা হয়। আবার অনেকেই বাণিজ্যিক ভিত্তিতে কচ্ছপের চাষ করে থাকে।

Read more »